ওগি-এর খেলোয়াড়
গল্প বলে যে, সুন্দরবনের গভীরে, যেখানে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ম্যানগ্রোভের পাতার ফাঁকে ফাঁকে নাচে আর নোনা জলে ঝিকমিক করে, এক মোহময়ী নারী দেখা দেয়। এই রূপসী প্রাণী হারিয়ে যাওয়া জেলেদের খোঁজে ফেরে, তাদের কাছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য নিয়ে আসে।

গভীর রাতের মতো কালো রঙের কিমোনো পরিহিতা, রূপসী কোমায়ো তার অমোঘ আকর্ষণে দুর্ভাগা মানুষদের মন হরণ করে। এই সুন্দরী তাদের প্রলুব্ধ করে একটি প্রাচীন খেলা, ওগি খেলার প্রস্তাব দিয়ে। যারা এই রমণীর প্রস্তাব গ্রহণ করে, তারা নিজেদের খুঁজে পায় ম্যানগ্রোভের জটিল শিকড়ে ঘেরা একটি মায়াবী জগতে, যেখানে প্রতিটি চাল তাদের আরও গভীরে নিয়ে যায়।
খেলা যত এগোয়, তত জেলেদের চোখে ক্লান্তির ছায়া নামে। রূপবতী কোমায়োর উপস্থিতিতে তাদের মন ক্রমশ জোয়ার-ভাটার মতো দোলায়িত হতে থাকে, চিন্তাশক্তি ম্যানগ্রোভের কুয়াশার মতো ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন হয়ে আসে। অবশেষে তারা এক গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়, যেমন করে জোয়ারের জল ধীরে ধীরে সুন্দরবনের শিকড়গুলোকে ডুবিয়ে দেয়।
এই মরণঘুমের মুহূর্তে মায়াবিনী কোমায়ো তার প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে - এক ভয়ঙ্করী ডাইনি, যার সৌন্দর্য মৃত্যুর জালের মতো। এই মায়াবিনী তার শিকারের জীবনীশক্তি শুষে নেয়, শুধু একটি খালি খোলস রেখে যায় যা একসময় একজন জীবন্ত মানুষ ছিল। এই হতভাগ্য শিকারদের আত্মারা ভূতে পরিণত হয়, চিরতরে সুন্দরবনের জলাভূমিতে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়।
বাংলার লোককথার গভীরে শিকড় গেড়ে থাকা এই কাহিনী আসলে একটি সতর্কবাণী। এটি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সুন্দরবনের রহস্যময় সৌন্দর্যের পেছনে লুকিয়ে আছে অজানা বিপদ। যেমন জোয়ারের জল ধীরে ধীরে উঠে আসে, তেমনি মায়াবিনীর প্রলোভনও ধীরে ধীরে মানুষকে তার গভীরে টেনে নিয়ে যায়।